কি হবে জয়পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯'শ শিক্ষার্থীর !!
প্রায় ৯শ শিক্ষার্থীকে ছাড়তে হচ্ছে জয়পাড়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়।
“দিন বদলের বইছে হাওয়া,-শিক্ষাই আমার প্রথম চাওয়া- শিক্ষার আলো সবার মধ্যে পৌছে দিতে রাষ্ট্র যখন এমন মন্ত্র দিয়ে উজ্জীবিত করছেন শিক্ষার্থীদের, তখনই শিক্ষার মাধ্যমে জীবন গড়ার স্বপ্ন থেকে ছিটকে পড়ার উপক্রম হয়েছে ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯’শ শিক্ষার্থীর। নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে এবার পরীক্ষা দেওয়ার পর অকৃতকার্য হওয়ায় স্কুল ছাড়ার সিদ্ধান্তে বিপাকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ। কেন এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত তা কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। এক ক্লাসে ২য় বার পড়ার সুযোগ রয়েছে দেশের নামিদামি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তবে জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন সে সুযোগ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আরও খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ।
প্রথমবার অকৃতকার্য হলে স্কুল ছাড়তে হবে পূর্বে এ ধরনের কোন নোটিশও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এবছর ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১হাজার ৮শ শিক্ষার্থী স্কুল পর্যায়ে চুড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৯’শত শিক্ষার্থী এক থেকে একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে যাদের প্রত্যেকেই স্কুল ছাড়ার জন্য মৌখিকভাবে স্কুল থেকে নিদের্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে । এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে একাধিকবার দেখা করার পরও কোনও ভর্তির আশ্বাস না পেয়ে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়েছে। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী যারা গ্রেডিং পয়েন্ট ২ দশমিক ৫ পয়েন্টের কম পেয়ে পাশ করেছে এমন শিক্ষার্থীও বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে ৯ম শ্রেণির ১৮০ জন শিক্ষার্থী। গত বছর ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জয়পাড়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে রেজিস্টেশন করা শিক্ষার্থীরা ইচ্ছে করলেই সহজেই অন্য স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। জানা গেছে শিক্ষাবোর্ডে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলে মিলবে মাত্র ৫ জনের ছাড়পত্র। তাহলে বাকি ছাত্রদের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে এ দুঃচিন্তায় অভিভাবকরা। অকালেই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এদের জীবনে। এ বিয়ষে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল ইমরান জানান, স্কুলের চুড়ান্ত পরীক্ষার আগে আমাদেরকে জানানো হয়েছিল এক বিষয়ে ফেল করলে উত্তীর্ণ করা হবে না। কিন্তু স্কুল ছাড়তে হবে এ ব্যাপারে আমাদেরকে কোনো নোটিশ করেনি।
জামাল উদ্দিন নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর ফেল করার দায় এড়াতে পারে না জয়পাড়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। দায় এড়াতে এখন শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে বের করে দিবে এটা কোন ধরনের আচরণ। এদিকে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বাবা মায়েরা প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলতে গেলেও তাদের সাথে অসদাচরণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমন হটকারী সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অন্যান্য স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য ছুটোছুটি করলেও মিলছে না ভর্তি নিশ্চয়তা। তারা বলেন, রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে জয়পাড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে এটা একটা জটিলতা। এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে জয়পাড়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, এটি একটি আত্মঘাতী সিন্ধান্ত। বিগত বছরগুলোতে যেখানে একাধিক বিষয়ে ফেল করার পরও বিবেচনায় উত্তীর্ণ করা হত সেখানে এবছর এক বিষয়ে অকৃতকার্যদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার সিধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বড় দুঃসংবাদ। এধরনের সিদ্ধান্ত থেকে প্রধান শিক্ষকের ফিরে এসে পূনরায় এ স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা উচিৎ। এধরনের জটিলতা কাটিয়ে পূনরায় এ স্কুলেই ভর্তি হওয়ার সুযোগ চান শিক্ষার্থীরা।
জয়পাড়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম আব্দুল খালেক বলেন, সরকারী নিয়মানুসারে একটি শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৬০ জন শিক্ষার্থী পড়ার সুযোগ পাবে। তারপরও আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় নীতিমালা করে ৮০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছি। তবে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে এ ব্যাপারে সুষ্পষ্ঠ কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে দোহার উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিয়াকত আলী জানান, বিদ্যালযের শিক্ষার্থীরা তো আমাদের সন্তানের মতো। তারা যদি কোন ধরনের ভুলে করে থাকে তাহলে অন্তত একটি বার সুযোগ দিতে হবে। যেসব শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে তারা কোথায় যাবে এটাও বিবেচনা করতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষের। আমি মনে করি মানবতার দিক বিবেচনা করে এসব শিক্ষার্থীকে এ স্কুলে পড়ার সুযোগ করে দিতে পারলে ওদের ভবিষ্যত সুন্দর হতো।
কোন মন্তব্য নেই